Friday, March 30, 2018

কিছু অলিখিত ‘কমনসেন্স’

কিছু অলিখিত ‘কমনসেন্স’







কমনসেন্স, যা বাংলায় কাণ্ডজ্ঞান নামেই পরিচিত। হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউতে ২০০০ সালে প্রকাশিত এক নিবন্ধনে কাণ্ডজ্ঞান বিষয়টিকে ব্যক্তিত্ব-সংশ্লিষ্ট সক্ষমতা হিসেবে বলা হয়েছে। অন্যের কাণ্ডজ্ঞান কিংবা কমনসেন্স নিয়ে আমরা প্রায়ই বিপত্তিতে পড়ি। মানুষভেদে কাণ্ডজ্ঞানের মাত্রা কিন্তু ভিন্ন হয়ে থাকে। কর্মক্ষেত্র, পরিবার কিংবা ব্যক্তিজীবন-সব ক্ষেত্রেই আপনি কতটা ইতিবাচক ব্যক্তিত্বের অধিকারী, তার পরিচয় কিন্তু প্রকাশ পায় কাণ্ডজ্ঞানের মাত্রা অনুসারে। বাজফিডে এমনই কিছু অলিখিত সামাজিক কমনসেন্সের কথা প্রকাশ করা হয়েছে।

* কখনোই শব্দ করে খাবেন না। আপনার হাড় চিবানোর কড়কড়ে শব্দ অন্যের জন্য বিপত্তিকর কিন্তু। মুখ বন্ধ করে ধীরস্থিরভাবে খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
* অন্য কেউ যখন কথা বলবেন, তখন তাঁর কথার মধ্যে তাঁকে থামিয়ে দেবেন না। অন্যের কথা শেষ হলে তারপর কথা বলুন। চোখে চোখ রেখে কথা বলুন।
* রেস্টুরেন্টের ওয়েটার, লিফটম্যান কিংবা শপিং মলের সেলসম্যান বা গাড়ির চালক, যাঁরা আপনাকে সেবা দিচ্ছেন, তাঁদের সঙ্গে মার্জিত আচরণে কথা বলুন।
* চুইংগাম খাওয়া শেষে তা যেখানে-সেখানে ফেলবেন না। কাগজে বা টিস্যুতে মুড়িয়ে ডাস্টবিনে ফেলুন।
* সাইকেল পার্কিংয়ে কখনোই অন্যের সাইকেলের সঙ্গে নিজের সাইকেলের তালা বা লক আটকাবেন না।
* শপিং মলে এসকেলেটর সিঁড়িতে পাশাপাশি দুজন দাঁড়াবেন না। এসকেলেটর সিঁড়িতে স্থিরভাবে দাঁড়িয়ে ডান পাশের চলাচলের পথ খালি রাখুন, যেন কেউ হেঁটে উঠতে চাইলে যেতে পারে।
* প্রকাশ্যে মুঠোফোনের লাউডস্পিকারে কথা বলা কিংবা গান শুনবেন না।
* কেউ আপনাকে কোনো সহযোগিতা করলে ধন্যবাদ বলুন। ধন্যবাদ ও দুঃখিত বলার চর্চা করুন।
* ছোট শিশুদের আদর করার ক্ষেত্রে বাবা-মা কিংবা অভিভাবকের অনুমতি চেয়ে নিন। নবজাতককে স্পর্শ করতে চাইলে হাত জীবাণুমুক্ত করে নিন।
* প্রত্যেক মানুষেরই একটি ব্যক্তিত্বের বলয় থাকে, তার প্রতি সম্মান দিন।
* অন্যের জন্য দরজা খুলে ধরে রাখা কিংবা চেয়ার টেনে দেওয়ার সৌজন্য চর্চা করুন।
* খাবারের টেবিলে জোর করে কাউকে খাবার প্লেটে তুলে দেবেন না।
* ব্যাংকে কিংবা অন্য যেকোনো ক্ষেত্রে কখনোই কোনো ধরনের লাইন অমান্য করবেন না। আপনার আগে যিনি এসেছেন, তাঁকে সেবা নেওয়ার সুযোগ দিন।
* কারও বাড়িতে বেড়াতে গেলে তাঁর ব্যক্তিগত ল্যাপটপ কিংবা কম্পিউটার, মুঠোফোন ধরবেন না। এমনকি বেড়াতে গেলে অন্যের বেডরুমে উঁকি দেবেন না। অন্যের ব্যক্তিগত ডায়েরি কখনোই পড়বেন না।
* কাউকে বয়স, বিয়ে করেছেন কি না ও বেতন কত, এমন প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে বিব্রত করবেন না।
* অন্যের বাড়িতে বেড়াতে গেলে বাথরুম ব্যবহারের প্রয়োজন হলে পরিচ্ছন্নতার বিষয়টি খেয়াল রাখুন।
* অফিসে আপনার কাছে অতিথি কিংবা কেউ এলে তাঁর সঙ্গে হাসাহাসি কিংবা জোরে চিৎকার করে কথা বলবেন না।



সূত্র: Prothom All.

Wednesday, March 28, 2018

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ মহাকাশে উড়বে ২৪ এপ্রিল

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ মহাকাশে উড়বে ২৪ এপ্রিল


বাংলাদেশের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১’ আগামী ২৪ এপ্রিল মহাকাশে উৎক্ষেপণ করা হতে পারে। ওই স্যাটেলাইটের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ফ্রান্সের থ্যালেস অ্যালেনিয়া স্পেসের বরাত দিয়ে মঙ্গলবার এক টুইটে এমনটাই জানিয়েছে স্যাটেলাইট ও প্রযুক্তিবিষয়ক সংবাদমাধ্যম আমেরিকা স্পেস।

থ্যালেস অ্যালেনিয়া স্পেস টুইট বার্তায় জানিয়েছে, আজ বুধবার (২৮ মার্চ) কানে তাদের প্ল্যান্ট ছাড়বে স্যাটেলাইটটি। পরে সেটি বহনকারী কার্গো বিমান অ্যানতোনোভ নাইস বিমানবন্দর থেকে ২৯ মার্চ স্থানীয় সময় সকাল ৬টা থেকে ৮টার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে যাত্রা করবে। ওইদিন বোস্টনে যাত্রাবিরতির পর ৩০ মার্চ ফ্লোরিডার কেপ কার্নিভালে পৌঁছাবে ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১’।

কেপ কার্নিভালেই স্পেসএক্সের লঞ্চ ফ্যাসিলিটিতে লঞ্চ ভেহিকল ফ্যালকন ৯-র ইন্টিগ্রেশনসহ প্রয়োজনীয় পরীক্ষা শুরু হবে। দীর্ঘ পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর এটি মহাকাশের উদ্দেশ্যে উৎক্ষেপণ করা হবে।

আমেরিকা স্পেস জানিয়েছে, উৎপাদন ও লঞ্চার মেনিফেস্ট বিলম্বের কারণে আগামী ২৪ এপ্রিল বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের সম্ভাব্য তারিখের ব্যাপারে নিশ্চিত করেছে স্পেসএক্স।

যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা স্পেসএক্সের ‘ফ্যালকন-৯’ রকেটে করেই বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ মহাকাশে পাঠানো হবে। এর মাধ্যমে বিশ্বের ৫৭তম স্যাটেলাইট ক্ষমতাধর দেশের তালিকায় নাম লেখাবে বাংলাদেশ।

এর আগে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের জন্য রাশিয়ার উপগ্রহ কোম্পানি ইন্টারস্পুটনিকের কাছ থেকে অরবিটাল স্লট কেনে বাংলাদেশ। মহাকাশের ১১৯ দশমিক ১ পূর্ব দ্রাঘিমায় প্রায় ২১৯ কোটি টাকায় ১৫ বছরের জন্য এই কক্ষপথ কেনা হয়েছে।

এদিকে স্যাটেলাইট পাঠানোর কাজটি বিদেশে হলেও এটি নিয়ন্ত্রণ করা হবে বাংলাদেশ থেকেই। এজন্য গাজীপুরের জয়দেবপুর ও রাঙ্গামাটির বেতবুনিয়ায় দুটি গ্রাউন্ড স্টেশন নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। যা নিয়ন্ত্রণে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে গ্রাউন্ড কন্ট্রোল স্টেশনের যন্ত্রপাতিও আমদানি করেছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)।

-(Collected from RTV Online Facebook Page)

Wednesday, March 21, 2018

ঈগলের ৭ নীতি


ঈগলেরনীতি, অনুসরণে হতে পারে তোমার উন্নতি:



বিধাতা পৃথিবীকে এমনভাবেই সৃষ্টি করেছেন যে প্রকৃতি থেকেই মানুষ শেখার জন্য খুঁজে পায় অসংখ্য উৎস। সৃষ্টির সেরা জীব হিসাবে মানুষ দাবিদার হলেও পশু-পাখিদের কাছ থেকেও কিন্তু শেখার আছে অনেক কিছু! নেতৃত্ব থেকে শুরু করে মিতব্যয়িতা, পারিবারিক বন্ধন ইত্যাদি অনেক কিছুই আমরা তাদের দৈনিক কার্যক্রম দেখে শিখতে পারি।
ঈগলকে আমরা চিনি শক্তিধর, দক্ষ একটি শিকারি পাখি হিসাবে। তবে পাখির রাজা ঈগল নিজ জীবনে মেনে চলে ৭টি মূলনীতি যা মানুষ হিসাবে আমাদের জন্য অত্যন্ত শিক্ষণীয় ও অনুসরনীয়।
চলো দেখে আসি এই ৭টি নীতি এবং তা হতে প্রাপ্য শিক্ষাগুলো!  

নীতি- ১:
ঈগল অনেক উঁচুতে উড়ে এবং কখনোই চড়ুই কিংবা অন্যান্য ছোট পাখিদের সাথে মেশে না, উড়েও না।
ঈগল অনেক উঁচুতে উড়ে এবং কখনোই চড়ুই কিংবা অন্যান্য ছোট পাখিদের সাথে মেশে না, উড়েও না।
ঈগল যেই উচ্চতায় উড়ে বেড়ায়, সেই উচ্চতায় অন্য কোন পাখি পৌঁছাতেও পারে না। এজন্যেই ঈগল একা ওড়ার সিদ্ধান্ত নেয়, কারোর সাথে দল বেঁধে নয়।

প্রাপ্য শিক্ষা:
কাক-চড়ুই যেহেতু ঈগলের সমান এতো উঁচুতে উড়তে পারে না, তাই ঈগল তাদের সাথে দল বাঁধে না।
মানুষ হিসাবে তোমাকেও জীবনে চলার পথে এমন মানুষগুলোর সাথেই চলতে-ফিরতে-মিশতে হবে যারা তোমার সমান স্বপ্ন দেখে, যাদের সাথে তোমার দৃষ্টিভঙ্গি মিলে, যাদের সাথে থাকলে তোমার ব্যক্তিগত উন্নয়ন সম্ভবপর হবে।  
বন্ধুত্ব করতে হবে সম-মানসিকতার মানুষের সাথে এবং এড়িয়ে চলতে হবে এই কাক ও চড়ুইদের, যাদের সাথে তোমার জীবনের লক্ষ্যে আকাশ-পাতাল পার্থক্য।

নীতি- ২:
ঈগলের রয়েছে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিশক্তি যার মাধ্যমে সে আকাশে থাকা অবস্থাতেই ৫ কিলোমিটার পর্যন্ত দেখতে পায়, তাও একদম স্পষ্ট! ঈগল যখন তার শিকার খোঁজে, সে তার সব ফোকাস সেটার ওপর নিয়ে যায় এবং বেরিয়ে পড়ে শিকারের জন্য। যত বাধাই আসুক না কেন, সেটিকে না পাওয়া পর্যন্ত ঈগল কোনক্রমেই তার চোখ সরায় না।

প্রাপ্য শিক্ষা:
ঈগল যেমন খুব স্পষ্টভাবে সবই দেখতে পায়, কিন্তু ফোকাস করে শুধু একটি প্রাণীর উপরে, তেমন ভাবে তোমাকেও সব কিছু জানতে হবে, খোঁজ খবর রাখতে হবে তবে ফোকাস রাখতে হবে যেকোনো একটি কাজের উপর।
নিজেকে জানো, জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণ করো এবং সেই একটি লক্ষ্যের পিছনেই ছোটো। যত বিপত্তিই আসুক না কেন, ফোকাস হারানো চাই না!

নীতি- ৩:
পাখির রাজা ঈগল সর্বদা জীবন্ত প্রাণীকে খাবার হিসেবে খেয়ে থাকে। কখনোই কোন মৃত জিনিস তারা ভক্ষণ করে না।

প্রাপ্য শিক্ষা:  
রোজ রোজ নতুন শক্তির চাহিদায় ঈগল পাখি কখনোই মৃত কিছু না খেয়ে বরং জীবন্ত ও নতুন কোন শিকারের পিছে ছুটে।
ঠিক একই ভাবে, গতিশীল পৃথিবীতে নিজেকে এগিয়ে রাখার লক্ষ্যে নিজেকে সর্বদা নতুন সব তথ্য দিয়ে আপডেটেড রাখতে হবে। প্রতি সেকেন্ডেই বদলে যাচ্ছে অনেককিছু। তাই সার্বক্ষণিক তোমাকে জানতে হবে সর্বশেষ তথ্য ও খবর। জীবনের লক্ষ্য আরও স্পষ্ট করার জন্য এসব নতুন তথ্য নতুন শক্তির যোগান দেয়।
তাছাড়াও, আশেপাশের কিছু মানুষ মৃত ও পচা মাংসের মতই। তারা সর্বদা এমন সব কথাই বলে যা আমাদের নিরুৎসাহিত করে। তবে এখানেই শিক্ষা নিয়ে হাজির হয় ঈগল পাখি। সে যেমন চড়ুই, কবুতরের মতো পাখিদের জন্য নিরুৎসাহিত না হয়ে আরও উঁচুতে উড্ডয়ন করে, তোমাকেও কোন কিছুতে কান না দিয়ে ঈগলের মতোই এগিয়ে যেতে হবে নিজের স্বপ্ন ছুঁতে।

নীতি- ৪:
ঝড় আসলে ঈগল পাখি তা এড়িয়ে না গিয়ে বরং ঝড়ের বেগকেই কাজে লাগিয়ে উঁচুতে উড়ে যায়। অন্যান্য পাখিরা যখন পাতা ও গাছের আড়ালে লুকিয়ে থাকে,  ঈগল তখন ঝড়ের বিরুদ্ধে তার ডানা ঝাপটে যায় এবং ঝড়ের বেগকেই কাজে লাগিয়ে মেঘকে ভেদ করে উপরে উঠে যায়। এমনকি একবার বাতাসের বেগ পেয়ে গেলেই  ঈগল তার ডানা ঝাপটানো বন্ধ করে দেয় এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবেই উপরে যেতে থাকে। ঝড়কে যেন সে খুব ভালবাসে!

প্রাপ্য শিক্ষা:  
চ্যালেঞ্জকে চ্যালেঞ্জ নয়, সুযোগ হিসেবে দেখতে হবে। অন্য সব পাখি যখন আশ্রয়ের জন্য জায়গা খুঁজে, ঈগল তখন ঝড়ের  মাঝেও উড্ডয়নে মগ্ন থাকে। ঝড়ের বেগকে কাজে লাগিয়েই ঈগল টিকে থাকে বৈরি আবহাওয়ায়।
তাই সাফল্যপিপাসু একজন স্বপ্নবাজকেও প্রতিটি চ্যালেঞ্জ সাদরে গ্রহণ করতে হবে। একমাত্র প্রতিকূল পরিস্থিতিই পারে নতুন কিছু শেখাতে, সমস্যা সমাধানের দারুণ দক্ষতাটি বাড়াতে। অতএব, চ্যালেঞ্জ আসলে এড়িয়ে না গিয়ে তার মুখোমুখি হতে হবে, দৃপ্ত হাতে লড়তে হবে। বাধা নয়, শক্তিতে পরিণত করতে হবে, ঠিক যেভাবে ঈগল করে।

নীতি- ৫:
একটা মেয়ে ও ছেলে ঈগল যদি কখনো বন্ধু হতে চায়, মেয়ে ঈগলটি প্রথমেই ছেলে ঈগলটির কমিটমেন্টের পরীক্ষা নিয়ে নেয়। কীভাবে?   
সাক্ষাৎ হওয়ার পর মেয়ে ঈগলটি মাটিতে নেমে এসে গাছের একটি ডাল তুলে নেয়। তার পিছে পিছে ছেলে ঈগলটিও উড়ে যায়। মেয়ে ঈগলটি সেই ডাল নিয়ে উপরের দিকে উড়ে যায় এবং একটি নির্দিষ্ট উচ্চতায় যাওয়ার পর গাছের সেই ডালটি নিচে ফেলে দেয়। তার পিছু নেওয়া সেই ছেলে ঈগলটি তা দেখে ডালটি ধরার জন্য দ্রুত নিচের দিকে যায়। ডালটি সে মেয়ে ঈগলের কাছে ফিরিয়ে আনে।
এই কার্যক্রমের পুনরাবৃত্তি কয়েক ঘণ্টা ধরে হতেই থাকে যতক্ষণ না পর্যন্ত মেয়ে ঈগল আশ্বস্ত হয় যে ছেলে ঈগলটি এই ডাল ফিরিয়ে আনার কাজটি আত্মস্থ করতে পেরেছে। এটা তার কাছে ছেলে ঈগলটির ‘প্রতিজ্ঞাবদ্ধতার’ পরিচয় তুলে ধরে। অর্থাৎ, ইংরেজিতে আমরা যেটাকে বলি Commitment। একমাত্র ‘প্রতিজ্ঞাবদ্ধতার’ পরিচয় দিতে পারলেই পরে তারা দুজন বন্ধু হতে পারে।

প্রাপ্য শিক্ষা:
এখান থেকে প্রাপ্য শিক্ষা এটাই যে, ব্যক্তিগত জীবনেই হোক আর পেশাগত জীবনেই হোক, কারোর সাথে কোন চুক্তিতে বা সম্পর্কে আবদ্ধ হওয়ার আগে তার Commitment যাচাই করে নিতে হবে। এমন কারোর সাথে কাজে যোগ দিতে হবে যে কাজের প্রতি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ও মনোযোগী।
নিজের কর্মচারী বা জুনিয়রদের অ্যাসাইনমেন্ট দিতে হবে এবং পরখ করতে হবে যে তোমার তত্ত্বাবধান ব্যতীত তারা কতটুকু ভালো কাজ করেছে, কত মনোযোগ ও গুরুত্বের সাথে কাজ করেছে।
ঈগল আমাদের এই শিক্ষাটা কত সুন্দর করেই না দিয়েছে!

নীতি- ৬: 
ডিম পাড়ার সময় আসলে বাবা ও মা ঈগল পাহাড়ের এমন একটি জায়গা বেছে নেয় যেখানে কোন শিকারির হামলা করার সুযোগ থাকে না। বাসা তৈরির পালা আসলে ছেলে ঈগল এই বাসা নির্মাণের জন্য প্রথমে কিছু কাঁটা বিছায়, তার উপর গাছের ছোট ছোট ডালা, তার উপর আবার কিছু কাঁটা দিয়ে একদম শেষে কিছু নরম ঘাস বিছিয়ে দেয়। ছোট্ট আবাসটির নিরাপত্তার জন্য বাইরের দিকে তারা কাঁটা ও শক্ত ডালা বিছিয়ে রাখে।
বাচ্চা ঈগলগুলোর যখন উড়তে শেখার সময় হয়, মা ঈগল তাদেরকে বাইরে ছুঁড়ে দেয় কিন্তু পড়ে যাওয়ার ভয়ে ছানাগুলো ফিরে আসে। মা ঈগল এবার সব নরম ঘাস সরিয়ে ফেলে পুনরায় তাদের বাইরে ছুঁড়ে দেয়। আর তাই ছানাগুলো যখন ফিরে আসে, কাঁটার সাথে আঘাত পেয়ে তারা নিজেই বাইরে ঝাঁপ দেয় এই ভেবে যে এতো প্রিয় মা-বাবা কেন এমন করছে?
এবারে বাবা ঈগল নিয়োজিত হয় তাদের উদ্ধারকার্যে। নিচে পড়ে যাওয়ার আগেই সে তার পিঠে করে ছানাগুলোকে ফিরিয়ে নিয়ে আসে। যতদিন পর্যন্ত ছানাগুলো তাদের ডানা ঝাঁপটানো না শুরু করে, এই প্রক্রিয়া চলতেই থাকে।

প্রাপ্য শিক্ষা:  
এখান থেকে শিক্ষা নেওয়ার মতো অনেকগুলো বিষয় আছে।
এরকম সুরক্ষিত আশ্রয় গড়ে তোলার এই প্রস্তুতি আমাদের শেখায় যেকোনো পরিবর্তনের জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার।
পরিবারের সব কাজে প্রত্যেকের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ সর্বদাই কাম্য। তা পরিবারের ছোট সদস্যদের কাছেও একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ হয়।
বাচ্চা ঈগলের গায়ে কাঁটা লাগায় তারা শেষ পর্যন্ত ডানা ঝাঁপটানো শুরু করে এবং তখনই প্রকৃতপক্ষে নতুন একটা বিষয় আবিষ্কার করে। তারা আবিষ্কার করে যে তারা উড়তে পারে!
অতএব এখান থেকে আমাদের শেখা উচিত যে, আমরা যেখানে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি, সারা জীবন ওখানেই থাকলে আমরা নতুন কিছু শিখব না, জীবন নিয়ে জানবো না, নিজের ক্ষমতাগুলো নিয়ে অবগত হব না। এক কথায়, ‘Comfort Zone’ থেকে বের হতেই হবে! নচেৎ নতুন কিছু শেখা কখনোই সম্ভব নয়।
পৃথিবীতে আর যা কিছুই হয়ে যাক, বাবা-মা কখনোই সন্তানের অমঙ্গল কামনা করেন না। মা ঈগল তার ছানাগুলোকে ছুঁড়ে দিতে চায় যেন তারা উড়তে শিখে, বাবা ঈগল তাদের পড়ে যাওয়া হতে বাঁচায়- এটাই কি অনুসরনীয় নয়?

নীতি- ৭:
বয়স বাড়ার সাথে সাথে ঈগল পাখির ডানার পালকগুলো দুর্বল হয়ে পরে, যে কারণে সে আগের মত খুব দ্রুত গতিতে উড়তে পারে না। দুর্বল বোধ করলে সে এমন একটি জায়গায় আশ্রয় নেয় যেখানে পাথর রয়েছে। সেখানে সে তার শরীরের প্রতিটি পালক টেনে ছিঁড়ে ও উঠিয়ে ফেলে। নতুন পালক না গজানো পর্যন্ত সেই দুর্বল ঈগল কোথাও বের হয় না। নতুন পালক গজিয়ে গেলে সে পুনরায় বজ্র গতিতে উড়ে বেড়ায়।

প্রাপ্য শিক্ষা:
কাজ, দায়িত্ব, পড়াশোনার যাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে যখন হাঁপিয়ে উঠবে, সিদ্ধান্ত নাও একটু বিরতি নেওয়ার। ছোট্ট একটি ছুটি নাও, সময় বের করো নিজের জন্য। এ সময়টিতে একান্তে চিন্তা করো কোন কাজটি তোমার কাছে অর্থপূর্ণ এবং কোনটি তোমার করার একেবারেই প্রয়োজন নেই। ঈগলের মতো তুমিও ঘাড় থেকে ঝেড়ে ফেলো সেসব অপ্রয়োজনীয় কাজের দায়িত্ব যা তোমার চলার গতিকে মন্থর করছে, এগিয়ে যাওয়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
সেই সাথে, নিজেকে যাচাই করে দেখো যে কোন কোন বদ অভ্যাসে তুমি বর্তমানে অভ্যস্ত। ঈগল পাখির মতই ঝেড়ে ফেলো সেসব বদ অভ্যাস; পুনরায় শুরু করো নতুন পথচলা।

সারাংশ:
১। সমমনা মানুষদের সাথে বন্ধুত্ব করো। তোমার জীবনে বন্ধুদের প্রভাব অনেক বেশি। তাই বন্ধু নির্বাচন করো বুঝে শুনে।

২। আশে পাশের সবকিছুর প্রতিই খেয়াল রাখো তবে পিছু নাও শুধু একটি লক্ষ্যের। সেই লক্ষ্য হতে কোন ভাবেই ফোকাস হারানো চাই না!

৩। সব সময় নতুন সংবাদ ও তথ্যের খোঁজ রাখো। পুরাতনকে ঝেড়ে ফেলো এবং অন্য মানুষের কথা শুনে নিজের স্বপ্নের পিছু নেয়া ছেড়ে দিবে না কখনোই।

৪। চ্যালেঞ্জকে চ্যালেঞ্জ নয়, সুযোগ হিসাবে দেখো। চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা না করলে নতুন কিছু কখনোই শেখা হবে না, যেই অবস্থানে রয়েছো তা হতে কখনোই  উত্তরণ করতে পারবে না।

৫। কাউকে নিয়োগ দেওয়ার পূর্বে তার Commitment যাচাই করো। ব্যক্তিগত হোক আর পেশাগত জীবনেই হোক, যাচাই করে নিতে ভুলবে না।

৬। যেকোন রকম পরিবর্তনের জন্য সর্বদা প্রস্তুত থাকো। অভিযোজনে অভ্যস্ত হও অর্থাৎ যেকোন পরিস্থিতে নিজেকে মানিয়ে নিতে শিখো। আর ভুলে যেয়ো না যে: “Life begins at the end of your comfort zone.”
Comfort zone থেকে না বেরোলে জীবনে অগ্রগামী হওয়া প্রায় অসম্ভব।

৭। নিজের সকল বদ অভ্যাস হতে বের হয়ে আসো। অপ্রয়োজনীয় কাজগুলো হতে নিজেকে দায়মুক্ত করো। নাহলে জীবন থমকে যাবে!

(বাইবেল গ্রন্থে ঈগলের উল্লেখ দেখার পরে Dr Myles Monroe ঈগল নিয়ে গবেষণা করেন এবং খুঁজে পান এই ৭টি নীতি। সেখান থেকেই তোমাদের সবার কাছে এই সুন্দর শিক্ষাগুলো তুলে ধরা হয়েছে।)

সবার জন্য শুভ কামনা।



(Collected from 10 minute school facebook page)